ব্যাংক খাতে একত্রীকরণ: স্বল্পমেয়াদি সমাধানে দীর্ঘমেয়াদি ঝুঁকি
"সম্পদের সাপ্তাহিক ছুটি থাকতে পারে, কিন্তু ঋণের কোনো ছুটি নাই"। তাই ঋণের ব্যবসায় ঝুঁকি বেশি।

মার্জার ও একুইজিশন (একত্রীকরণ ও অধিগ্রহণ) আর্থিক খাতে কখনও কখনও স্বল্পমেয়াদি লাভ এনে দিলেও, দীর্ঘমেয়াদে এটি কর্মী, গ্রাহক এবং সামগ্রিক অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর প্রমাণিত হয়। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, অধিকাংশ ব্যাংক একত্রীকরণ আর্থিকভাবে ব্যর্থ হয় এবং এটি শেয়ারহোল্ডারদের জন্যও ক্ষতিকর। অনেক ক্ষেত্রেই এই একত্রীকরণ শেয়ার মূল্যের পতনের অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
বিভিন্ন দেশে দুর্বল ব্যাংকগুলোকে বাঁচাতে সরকার বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করে। গবেষণায় দেখা গেছে, শুধু ব্যাংকিং নয়, অন্যান্য শিল্পেও একত্রীকরণের সাফল্যের হার খুবই কম (মাত্র ১৫-২০%)। আমাদের দেশেও অতীতে এ ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল, কিন্তু ফলাফল খুব একটা আশাব্যঞ্জক হয়নি।
একটি দুর্বল প্রতিষ্ঠানের পতন কখনো কখনো পুরো ব্যাংকিং খাত বা শেয়ারবাজারে আতঙ্ক সৃষ্টি করতে পারে। আবার যদি কোনো ব্যাংক দেউলিয়া হয়ে যায়, তাহলে আমানতকারীদের অর্থ হারিয়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে। এ কারণেই সরকার মাঝে মাঝে কৌশলগতভাবে মার্জার বা সরাসরি হস্তক্ষেপের মাধ্যমে ওই প্রতিষ্ঠানগুলোকে টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করে। কিন্তু এর উদ্দেশ্য সাধারণত ব্যাংকের দক্ষতা বাড়ানো নয়, বরং সংকট মোকাবেলার একটি তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ।
এই পদক্ষেপে একটি গুরুতর নৈতিক ঝুঁকি তৈরি হয়। একাধিকবার জনগণের করের টাকা খরচ করে এই প্রতিষ্ঠানগুলোকে উদ্ধারের চেষ্টা করা হয়েছে, যার ফলে এসব প্রতিষ্ঠান বুঝে গেছে—তাদের পেছনে সরকার আছে। ফলে তারা বারবার সাহস করে ঝুঁকিপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়।
সরকার যদি করদাতাদের অর্থ দিয়ে বারবার দুর্বল বা ব্যর্থ প্রতিষ্ঠানগুলোকে টিকিয়ে রাখে, তবে সেটি জনগণের অর্থের অপচয় ছাড়া আর কিছুই নয়।

অপরদিকে, যদি সরকার এই ব্যাংকগুলো নিজের নিয়ন্ত্রণে নেয়, তাহলে সরকারি ব্যবস্থাপনায় অদক্ষতা, দুর্নীতি ও অপরাধ ঢেকে যাওয়ার ঝুঁকি আরও বেড়ে যায়।
তাই, ব্যাংকিং খাতের একত্রীকরণ নিয়ে নীতিগতভাবে পুনর্বিবেচনা করা জরুরি—যাতে এটি কেবল কিছু সংখ্যক গোষ্ঠীর স্বার্থরক্ষা না করে বরং প্রকৃত আর্থিক স্থিতিশীলতা ও দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে কার্যকর অবদান রাখতে পারে।