অর্থনীতির প্রেক্ষাপটে ভবিষ্যতের বাজার প্রত্যাশা
সকল বিনিয়োগের মৌলিক বিষয় হল ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তা। তাই বিনিয়োগ কারীদের ভবিষ্যতের ফলাফল কে অনুমান করতে হয়। যেহেতু ভবিষ্যতের অনুমানকে যাচাই করার সুযোগ নেই, তাই ওই অনুমানের উপর নির্ভর করেই বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত নেয়া ছাড়া কোন উপায় থাকে না।
আমরা, বাজার বাড়বে না কমবে, তার ভবিষ্যৎ অনুমান করতে বাজারের সাথে অন্য অনেক বিষয়কে কোরিলেশন করে থাকি। যেমন
A র সাথে B র কোরিলেসন আছে, অর্থাৎ A র মান B কে প্রভাবিত করে এবং
B র মান A কে প্রভাবিত করে । কিন্তু এখানে C আরো একটি ফ্যাক্টর থাকেতে পারে যা A এবং B দুজনকেই প্রভাবিত করতে পারে, যা বেশিরভাগ সময় আমরা বিবেচনায় নেই না। যার ফলে আমাদের প্রত্যাশার সাথে বাজারের মিল থাকে না।
বাজার অর্থনীতির বাহিরে না, তাই বাজারের গতি বুঝতে গেলে,
অর্থনীতির সাইক্লিক অর্ডারের সাথে কিছু বিষয়ে জড়িত যা বুঝতে হবে। যেমন-
GDP, Output Gap and Inflation এই তিনটে বিষয়ের উপর নজর রাখা জরুরি।
এই বিষয়গুলো বিজনেস সাইকেল কে প্রভাবিত করে।
প্রথম দিকে আমার ধারনা ছিল বিজনেস সাইকেলটা দুই তিন বছর মেয়াদি কিন্তু পরবর্তীতে বুঝতে পারলাম ওটা আসলে ইনভেন্টরি সাইকেল। অর্থনীতিতে বিজনেস সাইকেল ১০ থেকে ১২ বছর বা তারও বেশি সময় ধরে হতে পারে।
ইন্ডিভিজুয়াল কোম্পানি বিশ্লেষণে ইনভেন্টরি সাইকেলটাও খুবই জরুরী। একটা কোম্পানি তার ইনভেন্টরি সাইকেল এর কোন স্টেজে আছে তা আইডেন্টিফাই করতে পারলে কোম্পানির ভবিষ্যৎ আয় সম্বন্ধে একটা ধারণা পাওয়া যায় ।
আর বাজার কেন ভালো হয় না ? তার উত্তর বিজনেস সাইকেল এর মধ্যে আছে।
আমরা বিজনেস সাইকেল এর রিসেশন স্টেজে আছি। জিডিপির আউটপুট গ্যাপ এখন পজিটিভ। যার ফলে বোঝাই যায় উৎপাদনশীল প্রায় সকল খাতের CGS বেড়ে গেছে, যা নিট আয়কে কমিয়ে দিচ্ছে। বাজারে কোম্পানিগুলির EPS দেখলেই তা বোঝা যায়
বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সম্পদকে আমরা চার শ্রেণীতে ভাগ করতে পারি Cash , Bond, Equity এবং Real estate । Equityর মতো বাকি সম্পদ গুলি যেহেতু এক্সচেঞ্জে ট্রেড হয় না তাই তাদের ঝুঁকি অব মূল্যায়িত থাকে। প্রতিটি সম্পদ শ্রেণীর উপরি Business Cycle প্রভাব বিদ্যমান।
আবার প্রতিটা ব্যবসা তার ভবিষ্যৎ বিক্রির সাথে সামঞ্জস্য রেখে inventory সংরক্ষণ করে । কিন্তু যখন ভবিষ্যতের বিক্রির পূর্বাভাসের পরিবর্তন দেখা দেয়, তখনই inventory cycle টা শুরু হয়। inventory cycle র আপ ফেজে বিক্রির পূর্বাভাস অনেক বেশি থাকে যার ফলে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান অধিক পণ্য উৎপাদন করে, কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পায়, সাথে উৎপাদন ক্ষমতাও বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং অর্থনীতিতে একটা চাঙ্গা ভাব দেখা দেয়। কিন্তু এরই মধ্যে কোন একটা সময়,কোন এক বাহ্যিক কারণে, প্রত্যাশিত বিক্রিতে হতাশা দেখা দেয় এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দেখে তার inventory পরিমান অত্যাধিক বেড়ে গেছে। এ সময় ব্যবসা দ্রুত তার উৎপাদন কমিয়ে ফেলে, ফলে বেকারত্ব বাড়তে থাকে এবং প্রবৃদ্ধি কমতে থাকে। সাধারণত inventory level পূর্ব অবস্থায় নিয়ে আসতে দুই থেকে তিন বছর সময় লাগে। inventory level বোঝার জন্য inventory/Sales ratio and inventory turnover ratio অন্যতম । একটা উদাহরণ দেয়া যাক, সম্প্রতি মার্কেটে একটা কোম্পানির QEPSg ৪০০০ শতাংশের উপরে হয়েছে । কোম্পানিটি ২০১৮ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত inventory/Sales ratio বাড়িয়ে চলেছিল। কাজেই আশা করা যাচ্ছিল ভবিষ্যতের বিক্রিতে একটা দুর্বলতা আসতে চলেছে। অন্যভাবে বলা যায় যখন রেশিও কমতে থাকে বা স্থির থাকে তখন আশা করা যায় ভবিষ্যতের বিক্রিতে সুবাতাস আস্তে চলেছে। যার ফলে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের আয় বাড়ার সম্ভাবনা থাকে।[More..]
এবার আসা যাক Business Cycle. কমবেশি সবাই এটা জানেন, এখানে বিস্তারিত আলোচনা করা সম্ভব না, কারো পড়ার ধৈর্য থাকবে না তাই আমি শুধু এর সাথে মার্কেটের প্রভাব আলোচনা করেছি।
Business Cycle র পাঁচটি face.
1. Initial Recovery
এটা মন্দা থেকে উঠে আসার প্রথম ধাপ। এ সময় ব্যবসায় আত্মবিশ্বাস বাড়তে থাকে।যেহেতু বেকারত্ব তখনও বেশি, তাই ভোক্তাদের আস্থা নিম্নস্তরে থাকে। মূল্যস্ফীতি তখনো কমার প্রবণতায় থাকে। দীর্ঘদিন মনদায় থাকা শেয়ার বাজার জোরালোভাবে বাড়ার প্রবণতা দেখা দেয়। ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদ, যেমন- ছোট স্টক, high risk বন্ড এবং ইকুইটির দিকে, বিনিয়োগকারীরা বেশি আকৃষ্ট হয়। inventory cycle একে সমর্থন করে।
2.Early Upswing
এ সময় ব্যবসায় আত্মবিশ্বাস বেশি থাকে। অর্থনীতিতে গতির সঞ্চার হয়, বেকারত্ব কমতে থাকে এবং আয় ব্যয় বাড়তে থাকে। এই পর্যায়ে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ার একটা ভয় থাকে। শেয়ার বাজার বাড়তে থাকে। যদি অর্থনীতির গতি চলমান না থাকে তবে এই face টা এক থেকে দুই বছরের মধ্যে শেষ হয়ে যায় এবং output gap আস্তে আস্তে ক্লোজ হয়।
3.Late Upswing
এ সময়টা অর্থনীতিতে output gap ক্লোজ হয় এবং অর্থনীতি overheating থাকে, বেকারত্ব কম থাকে, কিন্তু শ্রমের মূল্য বৃদ্ধি পায় না। মূল্যস্ফীতি দ্রুত বাড়তে থাকে, কেন্দ্র ব্যাংক অর্থনীতিকে স্থির করার জন্য soft landing এর চেষ্টা করে । শেয়ার বাজার তখনো ভয়ের সাথে বাড়তে থাকে, বড় ধরনের বুমিং না হওয়া পর্যন্ত।
4.Slowdown
এ সময় অর্থনৈতিক গতি ধীর হয়ে আসে। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান তার inventory level কমানোর চেষ্টা করে। স্বল্পমেয়াদি সুদ বাড়তে থাকে এবং এক সময় চরম পর্যায়ে পৌঁছায়। এ সময় শেয়ার বাজারের পতন দেখা দেয়, পতনের আগে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের শেয়ারে সুবাতাস দেখা দেয়।
5.Recession
সাধারণত পরপর দুই কোয়াটার GDP গ্রোথ কমলে, তাকে মন্দা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এ সময় ভোক্তা এবং ব্যবসা উভয়ের মধ্যে অনাস্থা দেখা যায়। আর্থিক চাপে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের দেউলিয়াত দেখা দেয়, অপ্রকাশিত অনেক আর্থিক জালিয়াতি সামনে চলে আসে। এ সময় স্বল্পমেয়াদি সুদ কমে যায়।শেয়ারের মূল্য তলানিতে থাকে এবং বিনিয়োগ কারিদের মাঝে অনাস্তা দেখাযায় । শেয়ার বাজার সাধারণত মন্দার পরবর্তী পর্যায়ে উঠতে শুরু করে এবং বাজারের ভালো পুনরুদ্ধার হয়।
Inventory cycle এবং Business cycle বুঝতে পারলে, কোম্পানির ভবিষ্যতের আয়া এবং শেয়ার বাজারের ভবিষ্যতের trend টা সম্বন্ধে একটা ধারণা পাওয়া যায়। আমরা যতই Regulator কে গালি গালাজ করি, বাজার একা Regulator র হাতেনা । বাজার এই অর্থনৈতিক চক্রের মধ্যে ঘুরপাক খায়।